মিয়ানমার সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন সইতে না পেয়ে পালিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলে আসে লাখো রোহিঙ্গা। এ দেশের অভ্যন্তরে সরকার তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয়।
সুযোগ পেয়ে নানা অপরাধ-অপচেষ্টা করে সীমান্তের ওপারের জনগণ। এবার বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাসেও তারা অপরাধ শুরু করেছে।
জানা গেছে, প্রবাসে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়ে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেতে অপচেষ্টা করছে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা। অবশ্য তাদের এ অব্যাহত অপরাধ রুখে দিতে তৎপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে দূতাবাসের মাধ্যমে এনআইডি সরবরাহের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এতে দেশটিতে বসবাসরত রোহিঙ্গারাও এনআইডি নেওয়ার জন্য আবেদন করছেন।
এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে পাঁচ শতাধিক আবেদন বাতিলও করেছে নির্বাচন কমিশন।
কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকেই জন্ম সনদ সংগ্রহ করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাগিয়ে নিয়ে আমিরাতে বসবাস করছে। মূলত তারাই এনআইডি পেতে আবেদন করছে।
জানা গেছে, আবুধাবিতে এ পর্যন্ত এনআইডি পেতে মোট পাঁচ হাজার ৯০ জন ব্যক্তি আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে চট্টগ্রামের, দুই হাজার ৩২১টি। এরপরে কুমিল্লা থেকে আবেদন পড়েছে এক হাজার ২৩৫টি। ঢাকায় আবেদন পড়েছে ৪৭৭টি। সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে রংপুর থেকে ৩৪টি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত আবেদন অনুমোদন হয়েছে এক হাজার ২০৪টি। তদন্ত শেষ হয়ে আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ৩৯৪টি। এছাড়া ৫৭৯টি আবেদন বাতিল করা হয়েছে। আবেদনকারীদের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে দুই হাজার ৯১৩টি আবেদন।
সবচেয়ে বেশি আবেদন বাতিল হয়েছে কুমিল্লায় ২৪৯টি, এরপরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আবেদন বাতিল হয়েছে চট্টগ্রামে ১১৮টি। ঢাকায় বাতিল হয়েছে ৭০টি আবেদন।
প্রবাস থেকে যেন রোহিঙ্গারা এনআইডি না পায়, সে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশনাও দিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২ উপজেলার জন্য গঠিত বিশেষ কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার ক্ষেত্রে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।
– চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রবাসীদের এনআইডি নিতে বেগ পেতে হবে
আরও জানা গেছে, এনআইডি পেয়ে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) পর্যন্ত আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছেন তিন হাজার ৭৯১জন। এদের মধ্যে এনআইডি পেয়েছেন ৩৩৬জন। পুনরায় আবেদন করেছেন ৯ জন। ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের সার্ভারের কেবল দেশের নাগরিকদের তথ্য রয়েছে এমন নয়। এই সার্ভারে মিয়ানমার থেকে আগত ১০ লাখ নাগরিকের আঙ্গুলের ছাপও রয়েছে। কাজেই এদের মধ্যে কেউ ভোটার হওয়ার চেষ্টা করলে ধরা পড়ে যাবে।
এছাড়া দূতাবাসে প্রশিক্ষিত লোকবলের মাধ্যমে এনআইডি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সন্দেহ হলেই অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে। তাই তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।
গত ১১ জুলাই আমিরাতে টিম পাঠিয়ে এনআইডি কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে। পরবর্তীতে প্রবাসী বাংলাদেশি আধিক্যের বিবেচনায় আরও ৪০টি দেশে এনআইডি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে এ উদ্যোগটি হাতে নেয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ইউএই প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়।
সে সময় অনলাইনে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা থেকে যাচাই করে সতত্যা পেলে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাস থেকে এনআইডি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করে। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। সুত্র: বাংলানিউজ
পাঠকের মতামত